শরীরের ত্বকের বিভিন্ন অংশে সুচের মাধ্যমে নেগেটিভ প্রেশার দিয়ে দূষিত রক্ত বের করে নেওয়ার প্রক্রিয়াকে চিকিৎসাবিজ্ঞানের ভাষায় বলা হয় কাপিং থেরাপি। আরবিতে একে বলা হয় হিজামা। শরীরের নানা স্থানের ব্যথা, মাইগ্রেন, উচ্চ রক্তচাপ, যৌন দুর্বলতা, চর্মরোগ, ডায়াবেটিস, কিডনি ও লিভারের সমস্যায় হিজামা করা হয়। কিন্তু এইসব রোগে হিজামার কার্যকারিতা বৈজ্ঞানিকভাবে প্রমাণিত নয়। প্রায় ৩০০০ বছর আগে চালু হওয়া এই চিকিৎসা পদ্ধতি বর্তমানে আরব, চীন, আফ্রিকা ও কোরিয়ার কিছু অঞ্চলে জনপ্রিয়।
প্রাচীন কালে হিজামা করা হতো পশুর শিং দিয়ে। তারপর একসময় বাঁশ ও সিরামিকের কাপ তৈরি করে হিজামা করা হয়। কিন্তু বর্তমানে হিজামা হয় শুধুমাত্র কাঁচের তৈরি কাপ দিয়ে। কাপিং বা হিজামা মূলত দুই প্রকার, Wet Cupping ও Dry Cupping। কাপিং থেরাপিতে বেশিরভাগ সময়ই কাঁচের কাপ আগুনে গরম করা হয়। তারপর কাপটি শরীরের বিভিন্ন স্থানে বসিয়ে দেওয়া হয়। গরম কাপ শরীরে বসানোর ফলে কাপের ভিতর থাকা বাতাস ঠান্ডা হয়ে শূন্যস্থান তৈরি করে এবং কাপের ভিতর মাংস ফুলে লাল হয়ে উঠে। এর কয়েক মিনিট পর কাপের ভিতর রক্ত জমা হয়।
কাপিং থেরাপি মূলত যারা স্বাস্থ্যবান তাদের জন্য নিরাপদ। দেহের যেসব স্থানে কাপ বসিয়ে হিজামা করা হয় সেসব স্থানে রক্ত চলাচল বৃদ্ধি পায়। এর ফলে মাংপেশির টান উপশম হয় এবং শরীরে রক্ত প্রবাহ বৃদ্ধি পায়, কোষের সংখ্যা বৃদ্ধি হয়। তাছাড়া এটি নতুন সংযোজক টিস্যু গঠনে এবং নতুন রক্তনালী তৈরিতে সহায়তা করে। দাবী করা হয় যে, হিজামার মাধ্যমে দূষিত রক্ত বের করা হয় যার জন্য মানুষ আরোগ্য লাভ করে। কিন্তু যেসব রোগের জন্য হিজামা প্রচলিত তার সাথে রক্ত দূষণের সম্পর্ক নেই।
কাপিং থেরাপির ফলে দেহের নানা স্থানে কালো ছোপ ছোপ দাগ হয়, ত্বকে ইনফেকশন হয় ও ফোস্কা পড়ে, দেহের নানা স্থানে ফোড়া, শরীরে ব্যথা হতে পারে। যাদের উচ্চ রক্তচাপ ও হৃদরোগ আছে তাদের জন্য কাপিং বিপদজনক। তাছাড়া কাপিং এর সময় রক্তশূন্যতা, মাথা ঘোরা, মাথা ব্যথা, বমি বমি ভাব, ভ্যাসোভেগাল এটাক হতে পারে। আবার ফায়ার কাপিং এর ক্ষেত্রে অনেক সময় দেহে এতো বেশি ফোস্কা পড়ে যে তার জন্য স্কিন গ্রাফটিং করতে হয়।
কাপিং থেরাপি বৈজ্ঞানিকভাবে প্রমাণিত নয়। একে অনেকে ছদ্মবিজ্ঞান হিসেবে দেখেন। কিন্তু কাপিং এর উপর করা বৈজ্ঞানিক পরীক্ষার সংখ্যাও কম। হয়তো ভবিষ্যৎকালে যথাযথ গবেষণা হলে আমরা কাপিং থেরাপির বৈজ্ঞানিক উপকারিতাও জানতে পারবো।